চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::
চট্টগ্রাম মহানগরীর মাদকের সবচেয়ে বড় আখড়া বরিশাল কলোনির মাদক বিক্রি ও সেবনের সব ‘গিরা’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। বুধবার সকাল ১১টা থেকে ‘গিরা’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার এই অভিযান শুরু হয়। চলে বিকাল ৩টা পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন উপ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন, রেল কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছাড়াও র্যাব ও পুলিশের ২০০ সদস্য এ অভিযানে অংশ নেন।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন উপ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, বরিশাল কলোনি এবং মালি কলোনিতে বানানো ছোট ছোট খুপড়ি ঘরে বসে মাদকের আসর। যেগুলো গিরা হিসেবে পরিচিত।
সমাজকল্যাণ সংঘ নামে একটি ক্লাবও ব্যবহৃত হয় মাদকের আসর হিসেবে। এ ধরনের ছোট-বড় কমপক্ষে ১০০ স্থাপনা (গিরা) উচ্ছেদ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ করা বাসার সঙ্গে বরাদ্দপ্রাপ্তরা অস্থায়ী ঘর তুলে সেগুলো ভাড়া দিয়েছেন। মূলত এসব ঘরই ব্যবহৃত হচ্ছে মাদকের আসর হিসেবে। অভিযানের সময় শাবল দিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ফেলা হয়। পাকা দেওয়ালও ভেঙে ফেলা হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূসম্পদ বিভাগের কানুনগো আব্দুস সালাম বলেন, রেলওয়ের কোনো কোনো কর্মকর্তা বরাদ্দপ্রাপ্ত আছেন এবং কারা অবৈধভাবে আছেন, এটার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। খুব শিগগিরি এই তালিকা পুলিশকে দেয়া হবে।
সদরঘাট থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, মাদক প্রতিরোধে থানা থেকে চিঠি দিয়ে রেলের কাছে এই কলোনির অবৈধ বসবাসকারীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এটা পেলে কারা অবৈধভাবে বসবাস করে মাদকের ব্যবসা করছে সেটা নির্ধারণ করা সহজ হবে। এখন রেলের নির্মিত ঘর ছাড়া বাকি সব গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঝোঁপঝাড়ও কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ১৭ই মে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বরিশাল কলোনিতে হাবিব ও মোশাররফ মারা যায়। এরপর আরেক গ্রুপ মাদকের আখড়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে এলেও সদরঘাট থানা পুলিশ তিনজনকে আটকের পর সেই চেষ্টা ভণ্ডুল হয়ে যায়।
এরপর গত কয়েক দিন এখানে মাদক বিক্রি ও সেবন বন্ধ ছিল। আমরা স্থায়ীভাবে এটা বন্ধ করতে বিভিন্ন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছি। ১৯৮০ সালে রেলওয়ের জায়গায় গড়ে ওঠা এই মাদকের আখড়াটিতে প্রথমবার বড় ধরনের কোনো উচ্ছেদ অভিযান হলো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পুলিশের তথ্যমতে, বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রক মাদক সম্রাট ফারুক ওরফে বাইট্যা ফারুক ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর মাদক আখড়া বরিশাল কলোনির অদূরে আইস ফ্যাক্টরি রোডে র্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হয়। ফারুকের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন ইউসুফ। তার সঙ্গে ছিলেন সালামত। খসরু ছিলেন ফারুকের ম্যানেজার। খসরুর ভাই শুক্কুরও ছিলেন এই সিন্ডিকেটে। মূলত তারাই ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বরিশাল কলোনির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক ছিলেন।
ফারুক মারা যাবার পর তার ভাই শুক্কুরের সন্দেহ হয়, ইউসুফ এবং সালামত মিলেই ফারুককে র্যাবের হাতে ধরিয়ে দেয়। এই সন্দেহ থেকে তাদের সিন্ডিকেটে ভাঙন ধরে। শুক্কুর তাদের গ্রামের বাড়ি পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের নন্দেরখীল গ্রামে চলে যান। ম্যানেজার খসরু টাকাপয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রণ চলে আসে ইউসুফ ও সালামতের কাছে।
সর্বশেষ র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়া হাবিব এবং মোশাররফ ছিলেন ইউসুফ-সালামত সিন্ডিকেটের সঙ্গে। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার পর এই সিন্ডিকেটের সবাই পালিয়ে যান। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার রাত পার হওয়ার পরেই শুক্কুরের লোকজন বরিশাল কলোনিতে এসে নিয়ন্ত্রণ নেয়।
পুলিশ জানায়, বরিশাল কলোনির ভেতরে মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে ছোট ছোট স্পট আছে যেগুলোকে তাদের ভাষায় গিরা বলা হয়। বরিশাল কলোনির ভেতরে মালি কলোনিতে ৮ নম্বর ব্লকে টিটির গিরা নামে একটি স্পট আছে যেটি মাদক ব্যবসায়ীদের অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহার হয়। স্টেশন কলোনিতে একটি স্পট আছে যেটি নাজমার গিরা নামে পরিচিত। এছাড়া স্বপন বড়ুয়ার গিরা, ডান্ডির গিরা, হালিম সাহেবের গিরা নামে আরও কয়েকটি স্পট আছে।
নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভিযানে কোনো গিরাই রাখা হয় নাই। গিরা নামধারী সব স্পট গুঁড়িয়ে সাফ করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে এখানে পুলিশের কঠোর নজরদারি এবং পাহারা থাকবে। যাতে মাদকের ব্যবসা আর না চলতে না পারে।
পাঠকের মতামত: